Happy Home & Healthcare Prokashoni

ডিম

আইভি খান ওয়াহিদ || 2024-04-17 07:44:49

ডিমের গড় ওজন প্রায় ৬০ গ্রাম। এতে প্রোটিন  ও ফ্যাট থাকে মাত্র ৬ গ্রাম করে।  এছাড়া থাকে ৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১.৫ মিলিগ্রাম লোহা, অন্যান্য খনিজ পদার্থ ৮গ্রাম এবং অধাতব  পদার্থ ৩ গ্রাম, যার মধ্যে ভিটামিন-সি বাদে অন্য সব ভিটামিন থাকে। পানি থাকে প্রায় ৩৫ গ্রাম ।

কোলেস্টেরল থাকে প্রায় ৭০০ মিলিগ্রাম এবং শক্তি পাওয়া যায় ৭০ ক্যালরির মতো। আমাদের দেহ গঠনের জন্য প্রোটিনের অন্যতম উপাদান যে ১০টি অ্যামাইনো  অ্যাসিড, তার সবকটিই ডিম থাকে। সেই অর্থে ডিম অবশ্যই পুষ্টিকর খাদ্য এবং সহজ পাচ্যও বটে।সেজন্য রোগীদের খাদ্য তালিকায় ডিমের স্থানটি বরাবরের জন্য বাঁধা। অনেক বাড়িতে বসন্ত, হামহস নানা ভাইরাসজনিত রোগ দেখা দিলে ডিমের প্রবেশ বন্ধ হয়। অথচ এ সময় শরীরে বাড়তি পুষ্টির জন্যে ডিম অবশ্যই প্রয়োজন। ডিমের নানা গুণ থাকা সত্ত্বেও ৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের ওপরে ১২ ঘন্টার বেশি ডিম রাখলে তার পুষ্টিগুণ কমে যায়। অথচ আমাদের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে গড় তাপমাত্রা সবসময়েই ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেন্টগ্রেড থাকে।হাসেঁর ডিমে ‘ট্রিপসিন ইনহিবিটর‘ নামক এক পদার্থ থাকে, যা আমাদের অগ্ন্যাশয় থেকে ক্ষরিত পাচকরসের ট্রিপসিন নামক একটি পদার্থের কাজে বাধার সৃষ্টি করে।এই ট্রিপসিন আবার আমাদের প্রোটিন পরিপাকে সাহায্য করে।কাজেই সেক্ষেত্রে হাঁসের ডিম খেলে হজমে গন্ডগোল হতে পারে। কিন্তু ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিলে, এই ট্রিপসিন ইনহিবিটর নষ্ট হয়ে যায়।কাজেই ডিম সবসময় পূর্ণ সেদ্ধ করেই খাওয়া উচিত। এছাড়া কাচাঁ ডিমে সালমোনেলা, সিগেলা ইত্যাদি কিছু জীবাণু সংক্রমণের আশষ্কা থাকে। গরমকালে এই আশষ্কা আরো বাড়ে। বেশি ডিম উৎপাদনের জন্য এবং পোলট্রিকে জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য নানা জীবাণুনাশক রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করা হয়। এর ফলে ক্ষতি হতে পারে। তবে শুধু ডিম নয়, যে কোনো খাদ্য উপাদানের ক্ষেত্রেই এ কথা সত্যি। কীটনাশককের ব্যবহারও দিন দিন বাড়ছে।

বেশি ডিম খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গিয়ে রক্তনালী ও হৃদযন্ত্রের অসুখ হতে পারে। অ্যাসিডিটি বাড়তে পারে। ফ্যাটিলিভার হতে পারে। কাজেই বেশি ডিম খাওয়ার কিছু সমস্যা আছেই। কিন্তু তাই বলে সপ্তাহে ৩/৪ টি সেদ্ধ ডিম খেলে তেমন ক্ষতি কিছুই হয় না। হাঁস, মুরগি বাছবিচারের দরকার নেই, ভালো করে সেদ্ধ করে খেলে দুটি থেকে প্রায় সমান পুষ্টিই পাওয়া যায়। তবে ডিম কখনোই কমপ্লিট ফুড নয়। এতে প্রধান খাদ্য উপাদান কার্বোহাইড্রেট থাকে না, থাকে না ভিটামিন-সি। ডিম থেকে অ্যালার্জি হয়। তবে সবার নয়। কারো কারো। যার হয়, তিনি ডিম খাবেন না। অ্যালার্জির প্রকাশ নানা ভাবে হতে পারে। কখনো সারা গা চুলকোয়, লাল চাকাচাকা হয়ে ওঠে, মুখ ফুলে যায়, বেশি ঘাম হয়, শ্বাসকষ্টও হতে পারে।

অনেকে মনে করেন ডিম খেলে বাত হয়। বাতের অন্যতম কারণ রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি। ডিমের সাদা অংশে ইউরিক অ্যাসিড থাকে। তবে তা এত সামান্য যে, কোনো ক্ষতি হয় না। ডিম খেলে সবসময় রক্ত চাপ বাড়ে তাও ঠিক নয়। ডিমের সাদা অংশে থাকে সোডিয়াম সল্ট অফ অ্যালবুমিন, খুবই অল্প পরিমাণে। তবে অতিরিক্ত ডিম, বিশেষ করে ডিমের কুসুম খেলে রক্তে কোলেস্টেরল বাড়তে পারে। এই  কোলেস্টেরলের স্তর রক্তনালীতে জমে গিয়ে তাকে শীর্ণ করে তোলে, অবরোধ সৃষ্টি করে। পরোক্ষভাবে রক্তচাপ বাড়তে পারে। কাজেই হাইপ্রেসারের রোগীদের ডিম কম খাওয়াই ভালো। বয়স্ক লোকেরা কোলেস্টেরলের বিপত্তি এড়াতে ডিমের সাদা অংশটিই শুধু খাবেন, ‍শিশুদের খাওয়াবেন ডিমের কুসুম। কুসুমে প্রোটিন বেশি থাকে, হজম করাও সহজ। তবে সুস্থ মানুষদের এত বাছবিচার না করলেও চলে।

Designed & Developed by TechSolutions BD